নিজস্ব সংবাদদাতা: শেষ অবধি সবাই-ই পাশ করলেও প্রথম ফলাফল বেরুনোর পরই রাজ্য জুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য পড়ুয়ারা। স্কুলের পর স্কুল ঘেরাও, প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের ঘেরাও থেকে হেনস্থা এমনকি শারীরিক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছিল। চলেছিল স্কুলের সম্পত্তি ভাঙচুর, আগুন লাগানো, পথ অবরোধ ইত্যাদি একের পর এক ঘটনা। ঘটনায় তখুনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী কয়েকদফায় বৈঠকে বসেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। পরে ফের নতুন মার্কশিট দিয়ে সবাইকে পাশ করানো। এই ঘটনার জেরেই সম্ভবতঃ সরে যেতে হল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসকে।
সঙ্গে অবশ্য উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারিণীকে ‘মুসলিম মেয়ে’ বলে রাজ্য জুড়ে তীব্র ধিক্কারটুকুও কুড়িয়ে নিয়েছিলেন। অবশেষে তাঁর পদ থেকে সরিয়েই দেওয়া হল মহুয়া দাসকে। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। যদিও নিজের কৃতকার্য নিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ করে মহুয়া দাস বলেছিলেন, “পরীক্ষার্থীর ধর্ম পরিচয় তুলে ধরা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। আবেগের বশে মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।” তাঁর দাবি ছিল, আসলে সকলের সঙ্গে রুমানা সুলতানার গৌরব ভাগ করে নিতে চেয়েছিল সংসদ। উদাহরণ হিসেবে তুলে এনেছিলেন বেগম রোকেয়ার প্রসঙ্গও
যদিও ততক্ষণে আগুনে ঘি পড়ে গিয়েছিল। সল্টলেকে শিক্ষা সংসদের দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। মহুয়ার পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। বিক্ষোভ হটাতে এলে পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষও বাধে তাঁদের। বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়। বিজেপি, সিপিএম, এসইউসি এমন কী যদিও তৃণমূলের তরফেও একই ভাবে মহুয়ার আচরণের নিন্দা করা হয়। দলের বিধায়ক তাপস রায় সে সময় বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা একেবারেই হওয়া উচিত ছিল না। ধর্মের উল্লেখ করে এক জন পড়ুয়ার পরিচয় দেওয়া একেবারেই সমীচীন নয়।’’ গোটা বিতর্কে রুমানাও জানিয়েছেন, ধর্ম না এনে তাঁকে শুধু ছাত্রী বললেই ভাল হত।
এই দুটি বিষয় থেকেই সম্ভবতঃ অপসারিত করা হল মহুয়া দাসকে। একটি সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় পরিচিতির বিষয়টি মহুয়া দাসের ওপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ তৈরি করলেও উচ্চমাধ্যমিককে ছাত্রছাত্রীদের অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়টি সরাসরি আঘাত হেনেছিল সরকারের ভাবমূর্তিতে। সরকারের বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়েছে সংসদের ভ্রান্তনীতির কারণেই এটা হয়েছিল। বিদ্যালয়গুলির পক্ষ থেকেও এই অভিযোগ আনা হয় যে সংসদের অবৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণেই ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে। এমনকি বহুক্ষেত্রে ভালো পড়ুয়ারাও সংসদের ভুল পদ্ধতির শিকার হয়েছিল।